Ratnagarvamma

মিসেস মাহমুদা বেগম

মিসেস মাহমুদা বেগম
স্বামী : মরহুম আলী আকবর কোরাইশ
ঠিকানা : মালঞ্চ-৩, ইস্কাটন গার্ডেন সরকারি কোয়ার্টার,
রমনা, ঢাকা-১০০০
১৯৪৭ সালের পহেলা জানুয়ারি নওগাঁ জেলার সদর থানার চকদেব পাড়ার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম শেখ পরিবারে মাহমুদা বেগম জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নওগাঁ সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৩ সালে মেট্রিক পাশ করে এবং ১৯৬৫ সালে চঞও ট্রেনিং শেষ করেন। ১৯৬৫ সালে কলেজের একজন ইংরেজী শিক্ষক আলী আকবর কোরাইশীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয় এবং দুইটি সন্তান হওয়ার পর ১৯৬৮ সালে তিনি খুলনা মহিলা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেন। এরপরও তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যান এবং ১৯৭৪ সালে ছয় সন্তানের মা অবস্থায় তিনি বি.এ পাশ করেন। ১৯৭৫ সালে স্বামীর চাকরিতে সমস্যা দেখা দিলে মাহমুদা বেগম আট (৮) সন্তান নিয়ে দিশেহারা হয়ে চাকরির চেষ্টা করেন এবং ১৯৭৫ সালেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শুরু করেন ও সংসারের সমস্ত দায়িত্ব নেন। খুব স্বল্প বেতনের চাকরির মাধ্যমেই তিনি সব ছেলে মেয়ের পড়াশুনা কোন রকমে চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে স্বামীর চাকরির জটিলতা দূর হলে মাহমুদা বেগমের জীবনে স্বল্প সময়ের জন্য সুখের দেখা পায়। কিন্তু তাও বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৮৬ সালে কোন সহায়-সম্পত্তি না রেখে স্বামী মারা যায়। এরূপ অবস্থায় তিনি বিভ্রান্ত না হয়ে অদম্য সাহসের সহিত আট সন্তান নিয়ে নতুনভাবে জীবন যুদ্ধ শুরু করেন। একাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতার সামান্য বেতনেই দৃঢ়তা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে সংসার পরিচালনা ও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ নির্বাহ করেন। স্বামীর মৃত্যুর সময় ছেলে-মেয়ে কেউ কোন চাকরি বা সাংসারিক ব্যয় নির্বাহের জন্য কোন কর্মে নিয়োজিত ছিল না। সবাই স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী। সবচেয়ে বড় সন্তান বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ছাত্রী এবং সবচেয়ে ছোট সন্তান ১ম শ্রেণীর ছাত্রী ছিল। একজন নির্ভিক সাহসী নাবিক যেভাবে ঝড়-ঝঞ্ঝা সম্পন্ন সমুদ্রে বৈঠা ধরে নৌকাকে তীরে নিয়ে আসেন তেমনি মাহমুদা বেগম সংসার সমুদ্রে একাই কাঠোর পরিশ্রম ও সংগ্রাম করে শুধু সফলভাবে সংসারই পরিচালনা করেননি, ছেলে-মেয়েদেরকে সঠিকভাবে লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। সাংসারিক প্রয়োজনে ছেলেদেরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ সৃষ্টি করতে না পারলেও একজন ছেলেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এবং আর একজন ছেলেকে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর অফিসার হিসেবে যোগদানের সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করেছেন। বর্তমানে এই দুইজন ছেলেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। অন্যদিকে প্রতিটি মেয়েই লেখাপড়ায় ভালো হওয়ায় অর্থের অভাবে তাদের লেখাপড়া বন্ধ করা বা বিয়ে-সাদীর চিন্তা করেননি। মেয়েদেরকে স্বাবলম্বী ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করার পরিকল্পনা নেন। বিশ্ববিদ্যালয় বা উচ্চ শিক্ষা ব্যাতিত মেয়েদের ভালো চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্য তিনি প্রতিটি মেয়েকেই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ শিক্ষা লাভের সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রতিটি মেয়েই প্রাথমিক শ্রেণী থেকেই লেখাপড়ায় ভালো ছিল। ৫ম শ্রেণী এবং ৮ম শ্রেণীতে বৃত্তি পেয়েছে। এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে পাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণীতে পাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ও মাস্টার্স পরীক্ষাতেও প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারি চাকরিতে যোগদান করেছে।
সংসার ও জীবন যুদ্ধে সংগ্রামও কঠোর পরিশ্রম করে ছেলে-মেয়েদেরকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত করার সফল উদ্যোগী মা হিসাবে মাহমুদা বেগমের নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করার মত। এই মাকে রতœগর্ভা সম্মানে ভ‚ষিত করতে পেরে আমরা আনন্দিত।
প্রথম সন্তান ঃ মেজর ইফতেখার আহমেদ কোরাইশী, (পিএসসি), এমএসসি
কর্মক্ষেত্র ঃ বাংলাদেশ আর্মি
দ্বিতীয় সন্তান ঃ কমান্ডার এহতেশাম আহমেদ কোরাইশী, বিএসসি, ইঞ্জিনিয়ার (বুয়েট), বাংলাদেশ নেভী
কর্মক্ষেত্র ঃ বুয়েট বাংলাদেশ নেভি থেকে এমএসসি করছেন।
তৃতীয় সন্তান ঃ ড. শামশাদ বেগম কোরাইশী, পিএইচডি, জাপান
কর্মক্ষেত্র ঃ প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান, রসায়ন বিভাগ, পরমানু শক্তি কেন্দ্র ঢাকা
বাংলাদেশ পরামানু শক্তি কমিশন
চতুর্থ সন্তান ঃ ড. তানজিমা পারভীন, পিএইচডি, সুইডেন
কর্মক্ষেত্র ঃ নরওয়েতে বসবাসরত
পঞ্চম সন্তান ঃ নাহিদ পারভীন, এমএসএস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মক্ষেত্র ঃ নিউ জার্সি, ইউএসএ-তে কর্মরত ও বসবাসরত
ষষ্ঠ সন্তান ঃ জনি পারভীন, এমএসসি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মক্ষেত্র ঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি কোর্সে অধ্যায়নরত
সপ্তম সন্তান ঃ নৌশিন পারভিন, এমএসসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মক্ষেত্র ঃ জাপানে পিএইচডি কোর্সে অধ্যায়নরত